চলতি বছর আবহাওয়া ভাল থাকায় ঠাকুরগাঁওয়ে মরিচের ব্যাপক ফলন হয়েছে। কম খরচ ও আধুনিক উৎপাদন পদ্ধতিতে চাষে কৃষকরা এমন ফলন পেয়েছেন। এছাড়াও এই জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে কাঁচা ও পাকা মরিচের হাট শুরু হয়েছে। কৃষকরা সেই হাটগুলোতে ভাল দামে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।
জানা যায়, স্থানীয় রুহিয়া রেলস্টেশন এলাকার ও তার আশেপাশের কৃষকরা ব্যাপক পরিমারে মরিচের আবাদ করেছেন। এ এলাকায় বিন্দু, সেকা, মাশকারা, মল্লিকাসহ বিভিন্ন জাতের মরিচের চাষ হয়। বর্তমানে কৃষকরা রেলস্টেশনসহ প্রতিটি রেললাইনের পাশে পাটের চট বিছিয়ে মরিচ শুকাতে দিয়েছেন। চাষিরা এই রেলস্টেশনের আশে পাশে মরিচ শুকিয়ে এখানেই পাইকারি দরে বিক্রি করেন। ব্যবসায়ীরা এখান থেকেই কিনে নিয়ে যান।
লিয়াকত আলী লাবু বলেন, আমি এবছর ১ বিঘা জমিতে বিন্দু ও বাঁশগাড়া জাতের মরিচ চাষ করেছি। সেচ ও পরিচর্যা বাবদ এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ১০ মণ মরিচের ফলন পেয়েছি। এবছর প্রতি মণ শুকনোমরিচ ১৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে বিঘাপ্রতি আমার প্রায় দেড় লাখ টাকা আয় হবে।
কৃষক শাহীন আলম বলেন, এবছর আমি ২ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকায় মরিচের ভাল ফলন পেয়েছি। দামও পাওয়া যাচ্ছে ভালো। চাষে আমার ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আর মরিচ বিক্রি করে প্রায় ৩ লাখ টাকা লাভ হবে।
মরিচ শুকাতে আসা সাবিনা বেগম বলেন, আমি মরিচ শুকাতে আমার স্বামীকে সাহায্য করি। এবছর আমরা ১৫ কাঠা জমিতে মরিচ চাষ করেছি। মাত্র ৬ মাসেই এর ফলন পাওয়া যায়। মরিচের চারা রোপণ থেকে শুরু করে সার-বিষ, রোদে শুকানোসহ সকল কাজ আমরা নিজেরাই করে থাকি। গতবারের তুলনায় এবছর অনেকে বেশি ফলন পেয়েছি। তবে জমিতে মরিচ নষ্ট হয়নি। বাজারে দামও বেশ ভালো।
জমিতে মরিচ সংগ্রহের কাজে শিশু-কিশোরের পাশাপাশি পরিবারের বয়স্করাও যোগ দিয়ে আয় করতে পারছেন। মরিচ সংগ্রহ করে প্রতিটি ঝুড়ি ভর্তি করে ২৫-৩০ টাকা হিসেবে দিনে ২০০-২৫০ টাকা আয় করছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, আমি অনেকদিন যাবত মরিচের ব্যবসা করছি। এ স্টেশন এলাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় ২৫-৩০ লাখ টাকার শুকনা মরিচ বেচাকেনা হয়ে থাকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরিচের ব্যাপক ফলন হয়েছে। ফলন বেশি পাওয়ায় কৃষকেরা বেশ খুশি হয়েছেন। এবছর ঠাকুরগাঁও জেলায় ২ হাজার ২২৩ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। এর থেকে প্রায় ১৬৩ কোটি টাকার শুকনা মরিচ উৎপাদিত হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।