Categories
স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

ছাদবাগান পরিচর্যা ও রোগ বালাই দমন ব্যবস্থাপনায় করণীয়


ছাদবাগান ব্যবস্থাপনা

ছাদবাগান: আধুনিক কৃষির এক আশাব্যঞ্জক কৃষি সেক্টর ছাদবাগানে নিরাপদ সবজি চাষ বিষয়ক খুঁটিনাটি অনেকেই জানেন শুধু সবাইকে এর চাহিদা ও গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য এ লেখা। ঢাকা শহরে কমপক্ষে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ ছাদ রয়েছে (সাড়ে চার হাজার হেক্টরের বেশি) যা দেশের কোন একটি উপজেলার সমান বা বেশি। যেখানে বাসস্থান, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস-আদালত, ব্যাংক, শপিংমল, কনভেনশন সেন্টার ইত্যাদি অধিকাংশ জায়গা দখল করে আছে। এই পরিমাণ জায়গা কোনো অবস্থাতেই ছোট করে দেখার উপায় নেই। ব্যক্তিপর্যায়ে বা একক প্রধানের বা সমিতির নিয়ন্ত্রণে বিধায় এসব স্থান সবুজের আওতায় বিশেষ করে সবজি-ফল চাষের আওতায় নিয়ে আসা অধিকতর সহজ ও নিরাপদ। বিল্ডিং কোডে ২০% সবুজ থাকার কথা রয়েছে (যা ছাদবাগান নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো ও পলিসি মেকারের ইচ্ছার প্রতিফলন) যেটি পুরোপুরি অনেক জায়গায় উপেক্ষিত থাকে। ঢাকা শহর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে অতি দ্রুত হিট আইল্যান্ডে (Heat Island) পরিণত হচ্ছে, যার পরিণাম পরবর্তী প্রজন্মকে ভোগ করতে হবে।

ছাদবাগানের একটি আবশ্যকীয় ও জনপ্রিয় কম্পোনেন্ট হলো- নিরাপদ সবজি আবাদ, যা একটি চ্যালেঞ্জও। ছাদবা গানিদের নিরাপদ সবজি খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে সবজি-ফসল চাষে শহুরে কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।

ছাদবাগান বিষয়ক গবেষণার হালচাল: ছাদবাগানে সবজি ও কৃষি ফসল আবাদ নিয়ে কৃষি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে যাচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ঢাকার মিরপুর-১০ এলাকায় ১০০টি পরিবার নিয়ে জরিপে দেখিয়েছে ছাদবাগানিদের ৪১% তরুণ, ৩০% মধ্যবয়সী এবং ২৮% বয়স্ক মানুষ। ফসলের মধ্যে অর্নামেন্টাল, ঔষধি, ছোট হার্বজাতীয় ফসলের চাষাবাদ করতে পছন্দ করেন। ২য় স্থানে ফল এবং ৩য় স্থানে সবজি আবাদের পরিমাণ। একটি পরিবারের উন্মুক্ত ও খালি স্থানে যে কোনো পাত্রে নিরাপদ সবজি চাষ পরিবারের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। সবজি চাষের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিরাপদ বা জৈবভাবে সবজি বা ফল চাষ করা ।

নিরাপদ সবজি চাষে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো জেনে রাখা ভালো-
ছাদ বাগানের জন্য উপযোগী ফল গাছের : অনেকে মনে করেন, বাসার ছাদে একটু ছোট জাতের, ঝোপালো ফল গাছ লাগানো ভালো। কিন্তু ১৫-২০ বছর যাবত ছাদ-বাগান করে এমন ব্যক্তি ও সংগঠনগুলোর মতে বাসার ছাদে কলম করে প্রায় সব ধরনের ছোট বড় জাতের ফল গাছ লাগানো যায়। আম, বিদেশি কাঁঠাল (আঠা, ভোতাবিহীন রঙিন জাত যা রোপণের দুই বছর পর ফল দেয়), পেয়ারা, বারোমাসী লেবু (কাগজি, সিডলেস, এলাচি), মাল্টা, কমলা, থাই বাতাবি, কুল (টক ও মিষ্টি), ডালিম, শরিফা, কামরাঙা, জাম, সফেদা, আমলকী, বারোমাসী আমড়া, জামরুল, অরবরই, বিলিম্বি, করমচা, কদবেল, আনার, ডালিম, লটকন, থাই লিচু, সাদা ড্রাগন ফল ছাড়াও গতানুগতিক সব দেশি ফলতো এখন সাধারণ বিষয়। বীজ থেকে যে সকল ফল নগরবাসী গতানুগতিক চাষ করে তার মধ্যে করমচা, শরিফা, বিলিম্বি ইত্যাদি কয়েকটি ছাড়া প্রায় সবই কলমের ফল গাছ।

ছাদবাগান বিষয়ক প্রশিক্ষণ : গবেষণায় জানা যায়, ঢাকা শহরের ৭৬% ছাদবাগানি প্রশিক্ষণ নিতে চায়। প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তার জন্য আপনার নিকটস্থ কৃষি অফিস হর্টিকালচার সেন্টার ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগসহ ফেসবুক গ্রুপগুলো পরামর্শ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রদান করা যায়।

ছাদবাগান ব্যবস্থাপনা : সঠিকভাবে ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি এবং শহুরে কৃষি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ের, হর্টিকালচার সেন্টার এর সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে ছাদবাগান করলে ছাদের ক্ষতি তো হয়ই না বরং টেকসই সবুজ আচ্ছাদন অক্সিজেন সরবরাহ করে বাসস্থান-অফিস ও প্রতিষ্ঠানকে আরো আরামদায়ক ও শান্তিময় রাখবে।

অলটারনেটিভ চাষাবাদ : একই স্থানে একই পরিবারের সবজি (পরিবর্তন করে চাষ) যেমন- টমেটো, বেগুন, আলু পাশাপাশি না করা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি ইত্যাদি একসাথে চাষ না করা।

মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা : ট্রাইকোডার্মা মিশ্রিত সার, কেচো সার এবং বায়োচার ইত্যাদি মাটি শোধন বা হাইজিন করতে ভালো উপাদান।

জৈব সার : ভার্মি কম্পোস্ট, রান্নাঘর ও খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ দিয়ে বানানো সার, চা-কম্পোস্ট, ডিম খোসা ভাঙা মিশানো, নতুন মাশরুম কম্পোস্ট (পটাশ ও ফসফরাস আধিক্য), নিম খৈল, সরিষা খৈল ইত্যাদি ছাড়াও যে কোনো বায়োলজিক্যাল কম্পোস্ট (ব্যাকটেরিয়াবিহীন) ব্যবহার করা যেতে পারে।

রোগ-পোকামাকড় দমন : নিরাপদ সবজি চাষে রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করতে হবে নিয়ম মেনে; শাকজাতীয় সবজিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করলেও চলে কিন্তু ফলজাতীয় সবজি চাষে সবজি আহরণের কমপক্ষে ২০ দিন আগে থেকে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করা। পোকা দমনে ফ্লাইং ইনসেক্টের জন্য ফেরোমন ট্রাপ, সোলার লাইট ট্রাপ (কারিগরি সহায়তার জন্য ডিএই, এআইএস, ফ্যাব-ল্যাব শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় যোগাযোগ করতে পারেন), আঠালো (Sticky trap) ট্রাপ, পেঁয়াজ পাতার ও ছোলা পেস্ট বা নির্যাস, রসুন, গাঁদা ও চন্দ্রমল্লিকার (সর্বাধিক কার্যকরী-ফুলের দোকানে ফেলে দেয়া ফুল সংগ্রহ করে) ফুলের নির্যাস ভালো কাজ করবে।

পার্চিং : ছাদবাগানে পাখি বসার জায়গা করে দেয়া ভালো। বাগানের ফল-সবজি তখনই পাখি খাবে যখন তা নিরাপদ ও বিষমুক্ত থাকবে। এরা অনেক পোকামাকড়ও খাবে। পাখিকেও খেতে দিন তাহলেই তো নিরাপদ সবজি ও ফসল উৎপাদনের সাথে সাথে টেকসই পরিবেশ রক্ষা হবে সবার জন্যই।
ছাদবাগানের নিরাপত্তা : ছাদ কার্নিশ বা ব্যালকনিতে পটে বা টবে ফুল-ফল-সবজি আবাদে সতর্কতা অবলম্বন করুন যাতে বিল্ডিং বা এপার্টমেন্টের নিচ দিয়ে যাতায়াতকারী পথচারী দুর্ঘটনার শিকার না হন।

লেখক: সমীরন বিশ্বাস
লিড-এগ্রিকালচারিস্ট, মদিনা টেক লিমিটেড



Source link